করোনার মহাদুর্বিপাকে থমকে যাচ্ছে সব ধরনের অর্থনৈতিক গতিশীলতা। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশ করোনার বহুল সংক্রমণে আক্রান্ত হয়। আর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দু’মাসের কঠোর নিষেধাজ্ঞায় সারাদেশকে অবরুদ্ধতার জালে আটকে দেয়া হয়। স্থবিরতার এমন দুঃসময়ে দৈনিক খেটে খাওয়া মানুষদের রুজি-রোজগারের ওপর আসে এক অবাঞ্ছিত হুমকি। বিপাকে পড়ে বড় বড় শিল্প-কারখানাসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অসহায় উদ্যোক্তারাও। সামাজিক দূরত্বের সঙ্গে নিরাপত্তার বলয় তৈরি করতে মানুষের সহজ মিলনে আসে এক অযাচিত দুঃসময়। যাকে কঠোরভাবে সামলাতে গিয়ে অর্থনীতির সচল চাকা গতিহীনতার কবলে পড়তেও সময় নেয়নি। বৃহদায়তন শিল্প-কারখানা যেমন সামনে চলার সংগতিকে নিরন্তর করতে হিমশিম খাচ্ছেন, পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের মালিকরাও এগিয়ে যেতে সেভাবে পারছেন না। ফলে পুরো শিল্পপ্রতিষ্ঠানেই নেমে আসে এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। সেখান থেকে মাথা তুলে দাঁড়াতে জরুরী হয়ে পড়ে। নতুন করে করোনার দ্বিতীয় মারাত্মক ঢেউ কলকারখানায় যে বিপত্তি তৈরি করে তা সামলাতে আরও কত কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। ইতোমধ্যে সরকার করোনা মহামারীর সার্বিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ৮০ লাখ শিল্প-প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কর্মযোগে ফিরে আসতে অনেক সময় নিচ্ছে। লকডাউনে প্রায় স্থবির হয়ে অসহায় সময় পার করছেন ২০ লাখ দোকান ব্যবসায়ী। নতুন উদ্যমে বিপন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কর্মবহুল জীবনে ফিরিয়ে নিতে ঘোষিত প্রণোদনা বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। এর অন্যথা হলে সংশ্লিষ্ট এই খাতটি চরম সর্বনাশের পর্যায়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে উড়িয়েও দেয়া যায় না। কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবকে মোকাবেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতোপূর্বে ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। আর এসএমই খাতের উন্নয়নে বরাদ্দ ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। প্যাকেজে সারা বাংলাদেশে সম্প্রসারিত কুটিরশিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা প্রদানে ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ দেয়া হয়। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃ অর্থায়ন স্কিমে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। গ্রামের দরিদ্র কৃষক, বিদেশ ফেরত প্রবাসী কর্মী, প্রশিক্ষিত বেকার ও তরুণ যুবকদের জন্য গ্রামীণ এলাকায় ব্যবসা করার নিমিত্তে স্বল্প সুদে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন শিল্প খাতে (কুটির, মাঝারি ও ক্ষুদ্র) অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে করোনায় বিপন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে ঘুরে দাঁড়াতে সরকারী প্রণোদনা বিভিন্ন মাত্রায় দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে গতিশীলতা আনতে সরকার ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। প্রধানমন্ত্রী উল্লিখিত টাকার নতুন দুটি প্রণোদনা প্যাকেজ কর্মসূচীর অনুমোদন দিয়েছেন। এই কর্মসূচীর আওতায় প্রান্তিক জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তার বলয় নিশ্চিতকরণও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ও নিশ্চিত করেছে যে, প্রথম ধাপে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাত এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য গৃহীত কর্মসূচী সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ব্যয় হবে। সরকার গত বছরও করোনার দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং নারীদের জন্য হরেক রকম প্রণোদনা দিয়ে তাদের চলমান কর্ম জীবনকে গতিশীল করেছে। দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায়ও সরকার এর অন্যথা করছে না। তবে যথার্থ সুবিধা বঞ্চিতদের নিমিত্তেই যেন এই প্রণোদনার প্যাকেজ প্রয়োগ করা হয় সেদিকেও কঠোর নজরদারি করতে হবে।
Leave a Reply